ইঞ্জিনিয়ার
নিরব আহ্মেদের জন্য পাত্রী খোঁজা
হচ্ছে। যেনতেন পাত্রী হলে
চলবে না । পাত্রীকে
হতে হবে শিক্ষিতা, সুন্দরী,
সম্ভ্রান্ত ঘরের কোন ধনির
দুলালী । হয়তো
পেয়েও যাবে কিছু দিনের
মধ্যে…, আর পাবেই বা’না কেন..? ইঞ্জিনিয়ার
বলে
কথা…! গত দু’বছর হলো এম.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং
শেষ করে নামি দামি
একটি বিদেশী কোম্পানিতে উচ্চ
বেতনে চাকুরী করছে ।
তাছারা এলাকায় পাত্রের সুনামেরও
কমতি নেই । এরকম
পত্রের কাছে কন্যাদান করতে
পারাতো একেবারে আকাশের চাঁদ হাতে
পাওয়ার মত । তাইতো
পাত্রীদের বাবা মায়েরা যেন
ইঞ্জিনিয়ার নিরব আহ্মেদের কাছে
কন্যাদান করার জন্য একেবারে
হুমরী খেয়ে পরেছে ।
আর নিরব আহ্মেদের পরিবারও
পাত্রী পক্ষের একটা না
একটা দুষ খোঁজে বের
করে তাদেরকে হতাসার জলে ডুবাচ্ছে
। এত ভালো
ভালো ঘর থেকে প্রস্তাব
আসার পরও তারা তাদের
ছেলের বৌ ঠিক করতে
পারছে না । এ
যেন বেশী মাছে বক
কানা আর কি..! আজকেও
তাদের পাত্রী দেখতে যাবার
কথা । পাত্রী
সম্পর্কে আগেই খোঁজ খবর
নেয়া হয়েছে । পাত্রীর
নাম বৃষ্টি । সে
অনার্স শেষ বর্ষে পড়ে
। সাবজেক্ট হলো
ইংলিস । বৃষ্টি
ছাত্রী হিসেবে যেমন মেধাবী
দেখতেও তেমন সুন্দরী ।
একেবারে হাজারে একজন ।
তাছাড়া তাদের আর্থ-সম্পত্তি,
প্রভাব-প্রতিপত্তিও চুখে পরার মত
। পাত্রীর বাবাকে
এলাকার সবাই এক নামে
চিনে । আর
চিনবেই বা’না কেন…?
তিনি যে প্রথম শ্রেনীর
কর্মকর্তা হয়ে চাকুরীতে ঢুকে
প্রমোশন পেতে পেতে শেষ
পর্যন্ত সচিব হয়ে চকুরী
থেকে রিটায়ার্ড করেছেন । এ
রকম লোক কি দু-চার-দশ গ্রামে
আরও দু-একজন খোঁজে
পাওয়া যাবে…? কাজেই ধরে
নেয়া যায় বৃষ্টির সঙ্গে
ইঞ্জিনিয়ার নিরব আহ্মেদের বিয়েটা
মনে হয় হয়েই যাবে
। এখন শুধু
দিন তারিখ ঠিক করার
পালা । কিন্তু
যার জন্য এত আয়োজন
তার এ বেপারে কোন
উৎসাহই নেই । সে
বসে বসে ভাবছে অন্য
কিছু । আজ
থেকে এক যুগ আগের
কথা.., তখন নিরব কেবল
এস.এস.সি পাস
করেছে । এ
সময়ই তার পছন্দ হয়
নীলা নামের মেয়েটিকে ।
নীলা দেখতে মুটামুটি সুন্দরী
হলেও ছাত্রী হিসেবে তেমন
ভাল ছিল না ।
আর তাদের পারিবারিক অবস্থাও
ছিল একেবারেই সাধারন । কিন্তু
তার পরও নিরব তার
ভালোলাগার কথাটা বলতে পারে
না নীলকে , পাছে প্রত্যাখ্যাত হয়
এই ভয়ে। তাই তার
ভালোবাসার কথা আকার ইঙ্গিতে
নীলাকে বুঝাতে চেষ্টা করে।
কিন্তু নীলা তা বুঝে
না , বরং সেই আকার
ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় যে
, তার ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা নিরবের
নেই । এমনকি
তার বাবাকে দিয়ে একদিন
কিছুটা শাষিয়েও দেয় নিরবকে ।
এর পর নিরব আর
এগোয় না । সে
মনে মনে ভাবে , এখন
তার যোগ্যতা নেই তাতে কী..?
একদিন তো হবে..।
সেদিন সে নীলার সামনে
এসে দ্বারাবে । নীলাকে
খুলে বলবে তার লোকানো
কথাগুলো । কিন্তু
সেই দিন আসার আগেই
বধু সেজে নীলা চলে
যায় অন্যের ঘরে ।
নিরব শুধু চেয়ে চেয়ে
দেখেছে কিন্তু বাঁধা দিতে
পারেনি । কিসের
উপর ভিত্তি করে বাঁধা
দিবে সে….? নীলা যে
তাকে ভালোবসেনি । আর
পারিবারিক ভাবে প্রস্তাব দিলেও
নীলার পরিবার রাজি হতো
না । কারন
নিরবের চোয়ে যোগ্য পাত্র
যদি পাওয়া যায় তাহলে
কেন তার কাছে বিয়ে
দিতে রাজি হবে…? তাই
শুধু যোগ্যতার অভাবে নীলার সাথে
নিরবের পরিনয়টা এজনমে আর হলো
না । কিন্তু
আজ নিরব যোগ্য ।
মান-সন্মান, যস-খ্যাতি, অর্থ-সম্পদ সবই তার
পদ তলে । আজ
যার সাথে নিরবের বিয়ে
ঠিক হতে যাচ্ছে সে
দেখতে নীলার চেয়ে অনেক
বেশী সুন্দরী , অনেক বেশী শিক্ষিতা
, অনেক বেশী সম্ভান্ত ।
এমনকি তাদের দুই পরিবারের
পারিবারিক অবস্থানের মধ্যেও আকাশ পাতাল
ফারাক । তাহলে
কি নিরব অনেক বেশী
কিছু পেতে যাচ্ছে আজ….?
যা কিছু নীলার মধ্যে
দেখেছিলো তার চেয়েও বেশী…?
তাই যদি হয় তাহলে
নিরবের মনে সুখ ধরা
দিচ্ছেনা কেন…? কেন সে
আনন্দে উচ্ছাসিত হতে পারছে না…?
একদিন নীলাকে শুধু চোখের
দেখা দেখে যেই আনন্দ,
যেই সুখ টুকু নিরব
পেত , আজ তার চেয়ে
অনেক বড় কিছু পেয়েও
সেই সুখের ধারে কাছেও
পৌছতে পারেনা নিরব ।
কিন্তু কেন…? নাকি সেই
বয়সটা আজ আর নেই…?
নাকি তার সুখানুভূতির গ্রন্থি
গুলো মরে গেছে…? নাকি
প্রথম ভালোলাগার সুখের সাথে অন্য
কিছুর তুলনা চলেনা…? নিরব
ভেবে পায় না ..।
তাই সে বসে বসে
ঝিমুতে থাকে…।লিখেছেন- মোঃ মোবারক হোসেন
mubarakhossain53@yahoo.com
0 মন্তব্য(গুলি)