বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে কখন যে রাত দুটো বেজে গেছে ঠাওর করতে পারিনি। মন টা আজ বিশেষ ভাল নেই। তোমার সৃতি গুলো হাতছানি দিয়ে পিছু ডাকছে।
জানালাটার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। সব নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। শুধু বাঁকা চাঁদটিই আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
মনে হচ্ছে যেন বলতে চাচ্ছে - মনের মানুষকে মনের কথা
বলতে না পারলে এমনই হয়। কতবার যে ভেবেছিলাম -তোমাকে আমার মনের সব কথা
খুলে বলব। কিন্তু তোমার সামনে গেলেই আমার সব কথা হারিয়ে যায়। তোমাকে না বলা কথাগুলো কবিতা বানিয়ে রেখেছি। চোখে চোখে যে কথার শুরু হয়েছিল, মন যে কত বার চেয়েছিল তোমায় বলব। কিন্তু আমি আসলেই একটা stupid । একবার কাছে ডেকে বলতেও পারলাম না, একসাথে পথতো দূরের কথা।
প্রথম যেদিন তোমাকে দেখলাম -তুমি ছাদে উঠে কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলে। এক পলকেই
তোমাকে আমার ভাল লেগে গেল। তারপর তুমি কাপড়ের বালতিটা পাশে রেখে আমার দিকে চেয়ে রইলে। আমিতো লজ্জায় আর তোমার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। একটু
পরে তুমি নিচে নেমে গেলে। একটু বিষন্ন হয়ে গেলাম। কিন্তু তুমি একটা বই নিয়ে আবার উঠলে। তোমার এই বই নিয়ে উঠার রহস্য আজও খুজে পেলাম না।
এমনি একদিন বিকেলে ক্রিমসন সূর্যটা দিগন্ত রেখার সাথে মিলে যাচ্ছিল তোমার অপেক্ষায়। তুমি এসেও ছিলে। যখন তুমি আমার দিকে তাকালে তোমার হরিণী চোখ দুটো
দিয়ে। আমিতো পুলকিত কন্ঠে বলেই ফেললাম-I am the king of the world । চোখে চোখ পড়তেই তুমি চোখ সরিয়ে নিলে। যেন তুমি বোঝাতে চাচ্ছিলে তুমি আমার দিকে দেখছিলেই না।
তারপর প্রতিদিন ব্যাটে-বলে এমন টাইমিং হচ্ছিল বলার মত না। সবসময় শুধু মনে
হত একটু ছাদে উঠি। আমি ছাদে উঠলেই তুমি একটু পরে চলে আস। তুমি কি আমাকে দেখতে পেতে নাকি মনের মিল হয়ে গিয়েছিল বুঝতে পারছিনা। কয়েক মাস আমাদের দেখা শুধু ছাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল। এত দিন কেটে গেল তবুও কথা বলার কোন
সুযোগই পেলাম না।
এর কয়েকদিন পর তোমার কি যে হল?? তুমি আর ছাদে উঠনা। আমি আকাশ খুলে তোমার অপেক্ষায় বসে থাকি। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় তবুও আমার অপেক্ষার
প্রহর শেষ হয় না। তোমার আসার অপেক্ষায় আকাশে মেঘ গুলো দাড়িয়ে থাকে। তুমি
না আসাতে এক সময় অভিমানী মন নিয়ে চলে যায়।
এরপর থেকে তোমাকে আর কোনদিন ছাদে উঠতে দেখিনি। এদিকে সামনে HSC পরীক্ষা।
এগুলোর চিন্তায় পড়ালেখাও তেমন হচ্ছেনা।
হঠাৎ একদিন পড়ন্ত বিকেলে তোমাকে প্রত্যক্ষ করলাম hood পরে। তোমার চোখ দুটো
দেখেই আমি তোমাকে চিনতে পেরেছিলাম । তোমার এত বড় চেঞ্জের কারন আমার কাছে রহস্যজনক। তুমি তো পাথর হয়ে আছ। আমি কি পরিমান কষ্ট নিয়ে আছি তুমি বুঝতেই পারলেনা। যত্ন করে মনের বাগানে যে ফুল ফুটালাম, তুমি শেখালে কিভাবে এগুলো খুশিমত ছিড়ে ফেলা যায়। আমার মনের আকাশে আর কোন চিল ওড়েনা, ছুটাছুটি করেনা কোন ফড়িং কিংবা প্রজাপতি। তুমি আমার জীবনে বসন্ত এনে দিয়েছিলে। আবার যখন তুমি চলে গেলে চৈত্রের রৌদ্রে মাটি যেমন ফেটে চৌচির হয় তেমনি হয়েছে আমার বুকটা। তুমি আমার জীবনে এসে আমাকে শিখিয়ে গেলে কিভাবে একা থাকতে হয়।
লিখেছেন -নিপুন চন্দ্র সেন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
0 মন্তব্য(গুলি)